এ কি হল? ; কিছু পাতা অধ্যয় ৪

এ কি হল?

এখন রাত ২টা ১০ মিনিট। কিন্তু, আমার চোখে এক ফোটাও ঘুম নেই। ভাবছি, প্রিয়া কি আমার সাথে আর কথা বলবে না। ওকি আমার শুধুই বন্ধু? তার চেয়েও বড় কথা আমি ওকে ভালবাসি নাকি পছন্দ করি? ভালবাসলে কেন ফিরিয়ে দিলাম আর না বাসলে কেনই বা কষ্ট পাচ্ছি? ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো। আজকে শুক্রবার ওর কথা ভাবতে ভাবতেই সারাদিন শেষ, আগের রাতের মত আজও ঘুম ছিলোনা। সকাল দশটা বাজে কিন্তু আজ স্যারের কাছে পড়তে যাবো না, ১১:৩০ মিনিট আমি মুক্তি সিনামার সামনে। কিন্তু, প্রিয়ার কোন খোজ নেই, রহিম ও রিকশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রহিম জিজ্ঞাসা করল: কি ভাই যাইবেন না?
আমি কোন উত্তর দিলাম না।
আবার বললো: মনটা আমনের খারাপ?
: রহিম ভাই তুমি চলে যাও, আমি আজকে কলেজে যাবো না।
: কি ল্লাই যাইবেন না ভাই? শরীর খারাপ?
: না রে ভাই। আমার কাজ আছে তুমি যাও।

আমি সেই আমার পুরান বন্ধুদের নিয়ে যেখানে আড্ডা দিতাম, সেখানে বসে আছি। ধানমন্ডি লেকটা ঠিক আগের মতই আছে কিন্তু জীবনটা কত বদলে গেছে, কালকে প্রিয়া যখন আমার সাথে ছিলো তখন আমি ছিলাম পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি আর আজ…. হঠাৎ পিছনের দিক থেকে কে যেন মেহেদী বলে ডাক দিলো, প্রথমে বুঝতেই পারি নাই। পরে বুঝলাম এটা স্কুল জীবনের বন্ধু মোরশেদ।
: কি রে মেহেদী কেমন আছোস?
: আমি ভাল, তুই?
: এইতো চলছে জীবন, আগের মতই।
: তুই কোন কলেজে ভর্তি হয়েছিস?
: কেন ঢাকা কলেজে তোকে বলিনি? তুইতো রাইফেলসে তাই না?
: হ্যাঁ, পড়াশুনা কেমন চলছে?
:ভালই,
এভাবেই মুরশদের সাথে কথা বলার পর বাসায় চলে এলাম। প্রিয়ার মোবাইলে কল দিলাম কিন্তু ড়ভভু। তাই আর উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইয়াসমিনের কাছে ফোন করলাম,
: হ্যাঁলো ইয়াসমিন,
: কে?
: আমি মেনাফা, প্রিয়া কি কলেজে এসে ছিলো?
: না ওতো অসুস্থ। তাই আসেনি।
: তুমি কেমন আছ?
: ভাল, তুমি?
: এইত, আচ্ছা রাখি, বাই পরে কথা হবে। প্রিয়ার মোবাইলটাও বন্ধ। তাই কোন যোগাযোগও নেই ওর সাথে। এভাবে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলো, আমি কলেজেও যাই না। স্যারের কাছেও যাই না। প্রায় প্রতিদিন ইয়াসমিনের কাছে ফোন করে খবর নেইও, কেমন আছে, কবে আসবে, সারাদিন কি করে, কলেজে আসবে নাকি ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমি এদিকে সারাদিন-সারারাত ওর কথা ভেবেই কাটিয়ে দেই। একবার ভাবি আমার দোষে ও অসুস্থ হয়ে পরেছে। আবার ভাবি, আমি তো ওকে কোনদিনও বলিনি যে, আমি তোমাকে ভালবাসি, তারপর আবার ভাবি আমি কি সত্যি ওকে ভালবাসি? নাকি পছন্দ করি? আমার কি মনের অজান্তেই ভালবাসা হয়ে গিয়েছিলো ?

আজকে শুক্রবার। তাই ১২টার মধ্যে গোসল করে বাসা থেকে বের হলাম, ভাবলাম কিছুক্ষণ লেকে বসে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে যাবো। ৮ নাম্বার ব্রিজের পাশে বসে আছি কিছুক্ষণ পর দেখি আমার দিকে শান্তু হেটে আসছে। এক সময় ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আজ কতকিছু বদলে গেছে।

ও হ্যাঁ! ওর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই ওর গায়ের রং ফর্সা, লম্বা চওড়া, দেখতেও সুন্দর আর পোশাকগুলা ও খুব মানানসই আর সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে সুন্দর সুন্দর কথা, যে কোন মেয়েই পাঁচ-দশ মিনিটে ওর প্রেমে পরে যায়। আবার ওর অনেক অভিজ্ঞতাও আছে কি ভাবে একসাথে দুই দুইটা উবধৎষরহম সধহধমব করতে হয়।

শান্ত কাছে এসে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলো,
: কি রে মেনাফা, কি খবর তোর? মাইয়া-টাইয়া কি কপালে জুটছে তোর? নাকি এখন ও বিধবা?
: ভাল, তুই কেমন আছিস? এখানে?
: আমি এইতো, আসলে, কান্তার এখানে আসার কথা তো তাই আর কি।
একটু রেস্ট নিয়ে আবার শুরু করলো…..
আসলে কান্তা মেয়েটা আমাকে রিয়েল লাভ করে বুঝলি, ওকে ত তুই দেখিসমি দেখলে তুই ও বুঝতে পারবি, মেয়েটা যে ভাল, হাজারে একটা মেয়ে…. কোন প্রকার বিরতি ছাড়া বকবক করছে আল্লাহর রহমতে মোবাইলটা বেজে উঠেছে বলে বেঁচে গেলাম। শান্ত একটু থেমে মোবাইলটা রিসিভ করে,
: হ্যাঁলো, জান কোথায় তুমি? কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার… কেন? তারপর আবার ও পাশের কথা শুনে… “ওকে বাই। আমিও মনে রাখবো।” বলে মোবাইলটা কেটে দিলো।
তারপর আবার আমার পাশে এসে বসে শুরু করে দিলো, আরে কান্তা হালিয়ে আমার সাথে সাথে একটা চীট করলো, আরে তুই আইতে পারবি না আগে কল দিয়া কইয়া দিলেই পারতি। আমি শান্তারে কইয়া আইতাম। তাওতো দুপুরটা আর মাটি হইতো না।
এবার আমি বললাম: কি রে শান্তাও কি কান্তার মত ভাল? এটুকু বলতে না বলতেই শান্ত আবার শুরু করে দিলো…..
: না না শান্তা খুব ভাল মেয়ে তাছাড়া শান্তার সাথে আমার একটা মিলও রয়েছে….
: কি মিল?
: এই যে আমার নাম শান্ত আর ওর নাম শান্তা।
: তাইত।
: তুই এক কাজ কর, তোদের কলেজের একটা মাইয়ারে পটাইয়া ফেল।
: কিভাবে?
: প্রথমে মাইয়ার হাত ধরবি তারপর কিছু ভালবাসার উরধষড়মঁব দিয়ে চিঠি লিখবি, দেখবি এধসব ড়াবৎ.
: কি উরধষড়মঁব বা কেমন উরধষড়মঁব দিব?
: আসলে একেক সময় একেক রকম উরধষড়মঁব দিতে হয়, গধরহ কথা ঝরঃঁধঃরড়হ বুঝতে হবে তারপর ঝরঃঁধঃরড়হ অনুযায়ী উরধষড়মঁব দিতে হবে,
: এর মধ্যে কিছু ঈড়সসড়হ ফরধষড়মঁব এর উদাহরণ দে তো।
: এস.এস.সি তে যেমন কমন কিছু পড়েছিলি এখানেও কিছু কমন প্রশ্ন আছে তবে প্রথমিক অবস্থায় কয়টা কমন প্রশ্নের উত্তর জানলেই চলবে, কারণ বেশির ভাগ প্রেমিকার ভাষাই এক।
: একটা কমন প্রশ্নের উত্তর বলতো।
: এই মনে কর তোর প্রেম হলে যে কোন সময়ে কারণ-অকারণে তোর কাছে জানতে চাইবে, তুমি আমাকে কতটা ভালবাস?
: তাই নাকি? তারপর?
: তারপর, তুমি আমাকে ভুলে যেও না, তুমি কি আমার কথা ভাব। তবে, সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করবে, তুমি কেমন আছ?
: তাই নাকি, চল নামাজ পড়ে এসে আবার কথা হবে। নামাজ পড়তে চলে এলাম ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদে। নামাজ শেষ করে আবার কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। তারপর বাসায় চলে এলাম।

বাসায় এসে ভাত খেয়ে দুপুরে ঘুমালাম। তারপর সন্ধ্যায় টেবিলে পড়তে বসলাম। ঠিক পড়তে না ভাবতে বসলাম বলা চলে, কারণ সামনে তপন চৌধুরীর পদার্থ বইটা খুলা থাকলেও মনটা কিন্তু প্রিয়াকে নিয়ে ভাবছে আরও ভাবছি প্রিয়া যদি আমাকে একটা কমন প্রশ্ন করে তাহলে আমি পাশ আর যদি কোন টহপড়সসড়হ প্রশ্ন করে আমি ফেল, তাই বসে বসে আমি কিছু ঈড়সসড়হ প্রশ্নের কিছু ঝঁরঃধনষব উত্তরও বের করতে লাগলাম।

http://www.joyenjoys.com/wp-content/uploads/2012/01/3D-Art-Work-2012-3.jpg

 

সকাল ১০টায় বেলায়েত স্যারের কাছে পড়তে যাচ্ছি। সরি পড়তে না মাইর খাইতে যাচ্ছি কারণ, এক সপ্তাহ পর মানে সুদীর্ঘ এক সপ্তাহ ফাকি দেওয়ার পর আবার ফিরে এসেছি। রিকশা নিয়ে রায়ের বাজার হাজির। মোবাইলটা আবার কান্তাছে কেন ভেবে জবপবরাব করলাম। হ্যাঁলো কে?
: হ্যাঁলো মেনাফা?
: হ্যাঁ কে ইয়াসমিন নাকি?
: হ্যাঁ, শুনো প্রিয়া আজকে কলেজে আসবে। তুমি কি আসবে নাকি?
: হ্যাঁ, আমি আসব।
: ওকে বাই, বলেই কেটে দিলো।
আমি বেল দিলাম। বেলায়েত স্যার দরজা খুলেই
: কি ব্যাপার, তুমি এসেছো?
: জ্বি স্যার, (কি যে বলবো তাই ভেবে চুপ করে আছি)।
: আমি তোমার আব্বুকে একবার ফোন করে বলতে চেয়েছিলাম…. বলতেই আমি বললাম: কেন স্যার আমিতো …
এটুকুই বলতেই: আসলে হঠাৎ করেই বাড়ির থেকে ফোন করেছিল, ঊসবৎমবহপু, বাড়িতে যেতে হবে। একবার অবশ্য তোমার আব্বুকে ফোন করে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরে আর সময় করতে পারি নাই। আম্মা খুব অসুস্থ হয়ে পরেছিলেন।
আমি ঘটনা বুঝে ফেললাম, তাই দেরি না করে জিজ্ঞাসা করলাম: উনি এখন কেমন আছেন?
: আল্লাহর রহমতে এখন পুরোপুরিই সুস্থ, তুমি এসেছিলে এর মধ্যে তাই না কষ্ট দিলাম তোমাকে,
আমি বল্লাম: না স্যার। কষ্ট কি আর।
কথা শেষ করে পড়তে শুরু করলাম।

বেলায়েত স্যারের কাছ থেকে পড়া শেষ করে বের হয়ে রাস্তায় রিকশায় জন্য অপেক্ষা করছি। দেখছি রহিমকে দেখা যায় কিনা, নাহ্ ১০০ মাইল এর মধ্যে রহিম তো দুরের কথা, রহিম বা রিকশার রও নেই, তাই আর কি করার আছে, হাটাই বুদ্ধি মানের কাজ। হাটতে শুরু করলাম, হাটছি আর ভাবছি এতদিন পর কলেছে যাচ্ছি আল্লাহ জানে কপালে কোন শনি আছে, অন্তত আর কিছু না হলেও তো ৫০০ টাকা তো জরিমানা অবশ্যই দিতে হবে। আবার ভাবছি, এপ্লিকেশন দিব কিনা?

হাঁটতে হাঁটতে প্রায় ২৫ মিনিট পর কলেজের সামনে চলে আসলাম। ক্লাস শুরু হতে আরও ১০-১৫ মিনিট বাকি, ক্লাসে ঢুকে পিছনের দিকে বসলাম, প্রিয়াকে দেখা যাচ্ছে না, কি ব্যাপার আসে নাই নাকি? তৈয়্যব মিয়া হাজির; কিরে এতদিন পর? কোথায় গিয়েছিলি?
: না। আমি একটু অসুস্থ ছিলাম ।
: তাই নাকি, তো মানুষিক ভাবে নাকি শারীরিক ভাবে?
: আসলে প্রথম প্রথম একটু এমনই হয়।
: মানে?
: প্রথম খড়াব ংঃড়ৎু তো একটু এমনতো হবেই।
: খড়াব ংঃড়ৎু মানে? কিসের খড়াব ংঃড়ৎু?
: প্রিয়া আর মেনাফার খড়াব ংঃড়ৎু.
: ফাউল কথা কবি না।
: ফাউল কথা, অসুস্থ হও একসাথে আবার সুস্থ ও হও একসাথে আবার কবি কিসের খড়াব ংঃড়ৎু তাই না?
আমি আর কি বলব? ধরাতো খাইয়াই গেছি।
প্রিয়া ক্লাসে প্রবেশ করছে, খুব হাসি মুখে মনে হয় খুব সুখে আছে। সামনের দিকেই বসে পরলো পিছনের দিকে আসলো না। এমন একটা ভাব আমাকে দেখে নাই। বুঝতে পারলাম এখনও রাগ কমে নাই। একটু পর ক্লাসে স্যার হাজির। একটা একটা করে ক্লাস হচ্ছে।
ক্লাস শেষে প্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছি। ২০-২৫ মিনিট হয়ে গেছে। আরও কিছুক্ষিণ অপেক্ষা করার পর প্রিয়া ইয়াসমিনের সাথে বের হয়ে আসল। এতো হাসছে যেন মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি। একটা কথা বলতে দশ থেকে বিশটা হাসি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কৌতুক বলছে। হাসতে হাসতে আমার সামনে দিয়ে এমনভাবে চলে গেল যেন আমাকে দেখাই যাচ্ছে না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমি কাঁচের তৈরি নাকি? আমাকে দেখেইনি? বাবারে যে মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতো আজ, আর সে এতো বদলে গেছে, দাড়াও আমার কিছু একটা করতে হবে।

.: কিছু পাতা । মেহেদী মেনাফা :.

একটি ভালবাসার গল্প

edited

“কিছু পাতা”উপন্যাসটি আমার জীবনের কিছু সত্য এবং কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে লেখা। এটাই আমার জীবনের প্রথম লেখা উপন্যাস, তাই ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।

(if you can’t read cause of Bangla text, you can try image format at this link http://www.black-iz.com/vinnokobor/kisupata.html) (Also you can download this book from this link @ http://www.black-iz.com/kp/kisupata.doc)

Muhammad Mehedi Menafa at facebook : www.facebook.com/muhammadmehedimenafa

Related posts